সারের কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে দেশের কৃষকদের না দিয়ে ভারতে পাচার করছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা। পাচার ঠেকাতে বডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যদের উপর হামলা চালিয়েছে চোরাকারবারীরা।
জানা গেছে, কৃষি প্রধান বাংলাদেশে কৃষির উৎপাদন বাড়াতে কৃষি উৎপাদনের উপর গুরুত্ব দিয়ে আসছে সরকার। তাই কৃষি উৎপাদনের সাথে সম্পৃক্ত সকল পন্য ও সরঞ্জামে ভুর্তুকি দিয়ে আসছে সরকার। কৃষি উৎপাদনে সারের প্রয়োজন অনেক। চলতি রবি মৌসুমে সবজি উৎপাদনে সারের চাহিদা বেশি। এ ছাড়াও আসন্ন বোরো ধান উৎপাদনেও সারের ব্যাপক প্রয়োজন। এ কারনে সরকার সার সরবরাহ বাড়িয়ে দিয়েছে। অপর দিকে সার সরবরাহ ও বিপননে মনিটরিং কমিটিও গঠন করে।
কিন্তু দেশের কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সার বিপনন ও সরবরাহ মনিটরিং কমিটিকে ম্যানেজ করে কৌশলে অবৈধ মজুদ করে গুদামজাত করে বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করেছে। ফলে চলতি রবি মৌসুমেই সার সরকারী বাজারের তুলনায় অতিরিক্ত দামে বিক্রি করছেন বলেও অভিযোগ কৃষকদের। সরকারী ডিলাররা রশিদ মুলে বিক্রির কথা থাকলেও কৃষকদের কোন রশিদ দেয়া হচ্ছে না। কখনও রশিদে সরকারী মুল্য লিখলেও মুলত অতিরিক্ত দাম ছাড়া সার মিলছে না।
কৃষকদের এমন অভিযোগে নিয়মিত ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করেও সারের বাজার স্থিতিশীল করতে পারছে না জেলা প্রশাসন। ফলে সরকারী মুল্যের অতিরিক্ত দামে সার ক্রয় করে রবি মৌসুমে সবজি চাষাবাদ করছেন কৃষকরা। এছাড়াও আসন্ন বোরো ধান চাষাবাদে সারের সহজলভ্যতা নিয়েও চিন্তিত কৃষকরা।
এ দিকে অবৈধ মজুদকৃত সার ভারতে পাচার হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। ভারতীয় সীমান্ত ঘেঁষা জেলা লালমনিরহাটের প্রায় ২২ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে কাটাতারের বেড়াহীন। এ অংশে কাটাতারের বেড়া না থাকায় খুব সহজে ভারতে পাচার হচ্ছে সারসহ নানান পন্য। চোরাকারবারীরা সার পাঠিয়ে ভারত থেকে গরু আর মাদকসহ নানান পন্য পাচার করছেন।
সীমান্তবাসী জানান, কৃষকের লেবাস নিয়ে পাচারকারীরা দিনের আলোতেও সার পাচার করছে। রাতের আঁধারে নিয়ে আসে গরু আর মাদক। তাদের সাথে স্থানীয় প্রশাসনের দারুন সখ্যতা রয়েছে। সার পাচার ঠেকাতে বডার গার্ড বাংলাদেশ(বিজিবি) সদস্যরা অভিযান চালালে পাচারকারীরা নিজেদের কৃষক দাবি করে সংঘবদ্ধ হয়ে বিজিবি’র উপরও আক্রমন করেন। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, মাঠ পর্যয়ের কৃষি কর্মকর্তা ও সরকারী দলের নেতাদের মদদে সার পাচার হচ্ছে বলেও স্থানীয়দের অভিযোগ।
জেলার আদিতমারী উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের মাঝপাড়া গ্রামের আব্দুস সাত্তারের ছেলে দুর্গাপুর বাজারের খুচরা সার বিক্রেতা সিরাজুল ইসলাম ও শরিফুল ইসলাম সার পাচারের বেশ সক্রিয়। গত দুই সপ্তাহে তারা দুই ভাই প্রায় এক হাজার বস্তা ড্যাপ সার ভারতে পাচার করেছেন বলে স্থানীয় একটি নির্ভরযোগ্য সুত্রে জানা গেছে। সিরাজুল ও শরিফুল ছাড়াও ওই সীমান্তে অনেকেই ভারতে সার পাচার করছেন বলে স্থানীয়দের দাবি। কৃষকরা সার না পেলেও পাচারকারীরা ঠিকই সার পাচ্ছেন বলে ক্ষোভ চাষিদের।
ভারতে সার পাচার হচ্ছে এমন একটি গোপন সুত্রে বৃহস্পতিবার(১ ডিসেম্বর) সকালে বডার গার্ড বাংলাদেশ(বিজিবি) লালমনিরহাট ১৫ ব্যাটালিয়নের দীঘলটারী বিওপি’র সদস্যরা কুটিরচর এলাকায় অভিযান চালায়। এ সময় দুইটি বাই সাইকেল যোগে ৪ বস্তা সার নিয়ে ওই সীমান্তের মেইন পিলার ৯২৫/৬ এর শুন্যরেখার ১০০ গজ দেশের অভ্যন্তরে পৌছলে সিরাজুল ও শরিফুলকে ধাওয়া দেয় বিজিবি। এ সময় সারের সাইকেল ফেলে পালিয়ে যায় বলে মামলায় দাবি করে বিজিবি।
জব্দকৃত এসব সার ও সাইকেল নিয়ে বিওপি ক্যাম্পের ফেরার পথে পাচারকারী সিরাজুল ও শরিফুল দলবল নিয়ে বিজিবি’র উপর আক্রমন চালিয়ে ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। খবর পেয়ে অতিরিক্ত বিজিবি সদস্য গিয়ে তাদেরকে উদ্ধার করে। পাচারকারীদের হামলায় দুইজন বিজিবি সদস্য আহত হন। এ ঘটনায় পরদিন শুক্রবার(২ ডিসেম্বর) বিজিবি’র দীঘলটারী বিওপি’র নায়েক সাবদাদুল হক বাদী হয়ে সার পাচারকারী সিরাজুল ও শরিফুলসহ অজ্ঞাত ১৫/২০ জনের বিরুদ্ধে আদিতমারী থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি মামলা দায়ের করেন।
মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা আদিতমারী থানার উপ পরিদর্শক(এসআই) মিজানুর রহমান বলেন, সার পাচারের সত্যতা মিলেছে। অভিযুক্তদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যহত রয়েছে।
জেলা সার বীজ সরবরাহ ও বিপনন মনিটরিং কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক আবু জাফর বলেন, জেলায় সারের চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। কৃত্রিম সংকট সৃষ্ঠিকারীদের ঠেকাতে বিক্রয় পয়েন্টে মাঠ পর্যয়ের কৃষি কর্মকর্তাদের তদারকির দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। কাটাতারের বেড়াহীন সীমান্তবর্তি জেলা হিসেবে সার ভারতে পাচার হচ্ছে এমন একটি তথ্যের ভিত্তিতে মনিটরিং কমিটি ও বিজিবিকে সজাগ করা হয়েছে। পাচার রোধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।